পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম স্থানগুলো, মৃত্যু নিশ্চিত যেখানে!!

জানা-অজানা
2

বিচিত্র এই পৃথিবীতে অনেক সুন্দর স্থান যেমন রয়েছে, একইসাথে রয়েছে ভয়ংকরতম কিছু স্থানও। এমনই গা শিউরে ওঠা স্থান সেগুলো যে ভুল করেও যেতে চাইবে না কেউ। আর সেই সব ভয়ংকর রহস্যময় স্থান গুলো নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন। তালিকায় আছে নরকের দরজা, খুনি লেক, শ্যাম্পেন হ্রদ,অদ্ভুতুড়ে ভয়ানক গাছপালায় ঠাসা শুকাত্রা দ্বীপ সহ আরও অনেক কিছুই। স্থানগুলো দেখে শিউরে উঠতে বাধ্য হবেন আপনি!

১. নরকের দরজা:
নরকের দরজা অথবা জাহান্নামের দরজা যাই বলি না কেন নাম শুনলেই গা শিউরে ওঠে। নরকের দরজা নামক স্থানটি তুর্কমেনিস্তান এ অবস্থিত। তুর্কমেনিস্তানের কারা-কুর মরুভূমির দারভাযা গ্রামের পাশে অবস্থিত এই স্থানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি কোম্পানি গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য খনন কাজ চালায়। তখনই ঘটে এক বিশাল বিস্ফোরণ। বন্ধ হয়ে যায় গ্যাসক্ষেত্রটি। মারা যায় অনেক লোক। আর সৃষ্টি হয় বিশাল আগুনে ভরা বড় বড় গর্ত। আর এই বিশাল গর্ত থেকে ক্রমাগত নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস আর তার থেকে আগুন। এই আগুনের তাপ এত বেশি যে তার পাশে ২ মিনিটের বেশি দাঁড়ানো সম্ভব নয় কিছুতেই। আর এরপর থেকেই স্থানটির নাম ‘নরকের দরজা’।

২.খুনি হ্রদ :

‘খুনি হ্রদ’ বা killer lake এর অবস্থান ক্যামেরুনে। এর আসল নাম NYOS হলেও স্থানীয় ভাবে এটা খুনি হ্রদ নামেই পরিচিত। হ্রদটি একটি মৃৎ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পাশে অবস্থিত। এটা লাভায় পরিপূর্ণ থাকলেও এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় পানি এবং এর মধ্য থেকে নির্গত হয় কার্বন–ডাই-অক্সাইড। খুনি হ্রদ নাম হওয়ার পেছনে এর মূল কাহিনী হচ্ছে ১৯৮৬ সালের দিকে এই হ্রদের মধ্য থেকে কার্বন–ডাই-অক্সাইড এর বিশাল বুদবুদ বের হয় যা সালফার এবং হাইড্রজেনের সাথে মিশে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। এর পর হ্রদের চারপাশের ২৩ কিঃ মিঃ জুড়ে ছড়িয়ে পরে এই গ্যাস। আর এই গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় ১৭০০ লোক এবং ৩৫০০ গবাদি পশু মারা যায়। এর পর থেকেই এর হ্রদের নাম হয় খুনি হ্রদ।

৩.শ্বেত মরুভুমি:

শ্বেত মরুভূমি নাম শুনলেই মনে হয় কাল্পনিক কিছু। কিন্তু বাস্তবে এই শ্বেত মরুভূমির দেখা মিলে মিশরের ফারাফ্রা মরূদ্যানে। চোখ ধাঁধানো এই মরুভূমির ইতিহাস থেকে জানা যায় যে পূর্ব সাহারা মরুভূমি যখন পানির নিচে ডুবে ছিল তখন তার একটি অংশে খড়িমাটি জমতে থাকে। আস্তে আস্তে এই জায়গাটি যখন সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে চলে আসে তখন ওই জমে থাকা খড়িমাটি শ্বেত মরুভূমির সৃষ্টি করে।

৪.পামুক্কালা(Pamukkala):

পামুক্কালা দেখে অনেকের বরফের পাহাড় বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটা বরফ নয়। এই পাহাড় বা ঝর্না সৃষ্টি হয়েছে স্ফটিকের মত ক্যালসিয়াম থেকে। পামুক্কালার অবস্থান তুরস্কে। তুর্কি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে পামুক্কালার অর্থ দাড়ায় তুলো। ইতিহাস থেকে জানা যায় পামুক্কালার সৃষ্টি হয়েছে ১০০০ বছর আগে। ১০০০ বছর আগে তুরস্কের দিঞ্জিল অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প সংগঠিত হয়। আর ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট ফাটল থেকে বের হয়ে আসে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পানি। তারপর যুগে যুগে এই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পানির প্রবাহ রূপ নেয় শ্বেত ঝর্নার পাহাড়ে।

৫.শ্যাম্পেন লেক:

নামে যাই থাকুক, মোটেও শ্যাম্পেন দিয়ে পরিপূর্ণ লেক নয় এটা। এই লেকটি Newzeland এর Wai-O-Tapu তে অবস্থিত। Wai-O-Tapu জায়গাটি আবার রুটুরুয়া তে অবস্থিত। মাউরি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে জানা যায় Wai-O-Tapu এর অর্থ হচ্ছে পবিত্র পানি অথবা রঙিন পানি আর রুটুরুয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে কাহুমাতামমিও, যে ছিল লর্ড মারিওর চাচা যিনি এই অঞ্চলটি আবিষ্কার করেছেন। ছবিতে কমলা রঙের যে অংশটুকু দেখা যাচ্ছে এটা হলো গ্রাফাইড এর বিশাল ভাণ্ডার আর শ্যাম্পেনের মত বুদবুদ আকারে যে গ্যাস বের হচ্ছে তা হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এর জন্যে এই লেকটির নাম শ্যাম্পেন লেক।

৬.বিয়ার লেক আরোরাঃ

বিয়ার লেক এর অবস্থান আলাস্কায়। এখানে আরোরা(Aurora) শব্দের অর্থ হচ্ছে বিয়ার লেক আকাশে মনোরম রঙিন আলোর খেলা। এটাকে উত্তরের আলোও বলা হয়। প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি এই বিয়ার লেক আরোরা।বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে যে, সূর্য বায়ুর সাথে যখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সংঘর্ষ ঘটে তখনই এই রহস্যময় এই আলো খেলার সৃষ্টি হয়।

৭.ঈগলহক নেকঃ

প্রকৃতির আরেক বিস্ময় হল তাসমানিয়ার ঈগলহক নেক। ঈগলহক নেক হছে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট খুব সরু ভূমি বা রাস্তা যা দুটি আলাদা ভূখণ্ড কে এক করেছে। স্থানীয় ভাবে এটি ‘নেক’ নামে পরিচিত। ভূতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক দুটি দিক দিয়েই ঈগলহক নেক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রিটিশ নির্বাসিত বন্দীরা পোর্ট আর্থার কারাগার থেকে পালানোর সময় ঈগলহক নেক ব্যবহার করত। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশরা ১৮৩০ সালে ঈগলহক নেক এ ভয়ংকর কিছু কুকুর পাহারা বসায়। আর এই স্থানটি ই পৃথিবীর বিখ্যাত ‘Bog Line’ নামে পরিচিত।

৮.শুকাত্রা দ্বীপঃ

শুকাত্রা দ্বীপ ইয়েমেনে অবস্থিত। দ্বীপ হিসেবে শুকাত্রা দ্বীপ যত আকর্ষণীয় তার চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হচ্ছে এর গাছপালা। দ্বীপ টি লম্বায় ১২০ কীঃ মিঃ লম্বা এবং প্রস্থে ৪০ কি: মিঃ লম্বা। এই দ্বীপের গাছ পালাগুলোও বেশ অদ্ভুত। এই দ্বীপের সবচাইতে অদ্ভুত গাছ হচ্ছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি। ছাতার মত দেখতে এই গাছ থেকেই রাবার লাগানো হয়। আরেকটি অদ্ভুত গাছের নাম হচ্ছে ‘Desert Rose’ অথবা মরুভূমির গোলাপ। এই দ্বীপ এ প্রায় ৭০০ রকমের গাছপালা রয়েছে।

2টি মন্তব্য

Saiful GAZI শীর্ষক প্রকাশনায় মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।