ভর্তি পরীক্ষা

শিক্ষা

এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শতকরা আশি ভাগের বেশি ফেল করেছে। অবস্থাটা আগে কেমন ছিল?
এ বছর প্রশ্ন পাশ হয়েছে, তাই হুট করে সবাই খারাপ হয়ে যাবে?
নাকি অবস্থাটা আগে থেকেই খারাপ ছিলো?
২০১১-১২ তে ফেল করেছে ৮১ ভাগ, ২০১২-১৩ তে ফেল করেছে ৮৩ ভাগ, ২০১৩-১৪ তে ৮১ ভাগ।
এটা খুবই দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে আমার তেমন কোন অভিযোগ নেই, তাদের অনেক পরীক্ষার্থী থেকে অল্প কয়েকজনকে বাছাই করতে হবে। মূল সমস্যা শিক্ষাতেই রয়ে গেছে এবং বহুদিন ধরেই আমরা এই খারাপ ব্যাপারটিকে লালন করছি। যেখানে আমাদেরকে যোগ্য মানুষ করে গড়ার কথা ছিল, সেখানে জিপিএ পাঁচের নামে একটা ভুল ধারণা করে দিচ্ছি শিক্ষার্থীদের। অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় যে হয়তো বেশি ভালো নয়, তাকেও বলছি তুমি জিপিএ ফাইভ। এই ভুল মূল্যায়নের ফলাফল ভালো না, সে নিজেকে নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তারপর ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে গিয়ে হতাশ হচ্ছে। যে ছেলেটার স্বপ্ন ছিল শুধু গান নিয়ে, শুধু ছবি আঁকা নিয়ে, সে খুব অল্প পড়ে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার পর গান বা আঁকার থেকে পড়ালেখার দিকে বেশি ঝোঁকে। তারপর শেষে হতাশ হয়ে কোনটাই করে না। আপনি ভাবছেন, পড়ালেখার দিকে ঝুঁকলে ব্যাপারটা তো ভালোই, আসলে মোটেও তা নয়। কুষ্টিয়াতে আমি দেখেছি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কতখানি কমে গেছে শুধু কোচিংগুলোর দৌরাত্ম্যে। শ্রদ্ধাবোধ, গভীর চিন্তন, সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে, বাড়ছে গোঁড়ামি। মানুষকে ভুল ধারণা দেয়ার ফসল কখনই ভালো নয়।

যারা পরীক্ষায় ভালো কর নি তাদের বলছি, এই দোষ পুরোপুরি তোমার নয়। এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা। আমি কোনদিন মনে করি না যে ক্লাসের ফার্স্ট বয়টাই দেশের সেরা সম্পদ। গণশিক্ষার সমস্যা সারা পৃথিবীতেই। অ্যাকাডেমিক শিক্ষায় ভালো নয় কিন্তু পৃথিবীতে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে গেছেন এমন মানুষ অনেক। তুমি তোমার ভালোবাসা কী সেটি নিয়ে চিন্তা কোরো। তোমার দেশটাকে কিভাবে আরও একটু সুন্দর করা যায়, এটা নিয়ে ভেবো। খাতা কলমের সৃজনশীল না, বুকের ভেতরটাকে সৃজনশীল করে তুলো। নিজেকে যোগ্য করে তুলো। জীবন নিয়ে একটা পরিকল্পনা রেখো। এটা সফল না হলে দ্বিতীয় আরেকটা পরিকল্পনাও রেখো। সেটা না হলে কী হবে ওটা পরে ভেবো। কোথাও ভর্তি হতে পারাটাই একমাত্র স্বপ্ন যেন না হয়, বুড়ো বয়সে নিজেকে কোথায় দেখতে চাও, ভেবো। একটা সুন্দর পরিকল্পনা হলো বনের ভিতরে একটা পুরনো রাস্তার মতো। সেই পথ ধরেই হাঁটতে হবে, এমন কথা নেই, চারিদিকে অনেক দূর ঘুরে আবার সেই পথে ফিরে আসতে পারবে। মাঝে মাঝে পথ মুছে যাবে, কিন্তু আবার দেখবে পথে ফিরে এসেছ, অথবা আরও সুন্দর একটা পথে উঠে পড়েছ। আর একবার যখন পথ চেনা হয়ে যাবে, তখন পথ খুঁজে না পেলে নিজেই পথ গড়ে নিতে পারবে। তাই শুরুর একটা পথ রেখো। অনেক দোয়া আর শুভকামনা রইল তোমাদের জন্য।

মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.