ফুটপাত।

স্বদেশ

……ফুটপাত…..


ঢাকা সিটি ফুটপাথ লিখে গুগলে সার্স দিয়েছেন কখোনো? না দিয়ে থাকলে একবার দিয়ে দেখুন কি সব দৃশ্য আপনার সামনে আসে। গুগল আপনার দেশের রাজধানীর কি দৃশ্য দেখায়, দেখে মনে-মনে নিজেকে গর্বিতভাবুন এই ভেবে যে, এত সুন্দর একটি দেশের নাগরীক আপনি, যার রাজধানীকে মানুষ এভাবে চিনছে গুগলের কল্যানে। কি-দিয়েছেন? খুব ভালো করেছেন। কি দেখছেন আপনার ফুটপাতের অবস্থা? লজ্জা লাগছে? এটা আপনার সিটি? এতো অনিয়ম, অপরিচ্ছন্ন, নোংরা আপনার সিটি? বিদেশি কোন গেষ্ট অাসলে আপনার সিটির অবস্থা দেখলে লজ্জায় পড়বেন তাই ভাবছেন? আপনি হয়তো ভাবছেন। কিন্তু যারা হর্তা কর্তা নগরপিতা তারা তারা এ বষিয় নিয়ে মোটেও ভাবছেনা। তারা ভাবছে অন্য কিছু। কি সেই অন্য কিছু? সেটা হচ্চে টাকা, টাকার ধান্দায় ব্যাস্ত তারা। আপনার সুযোগ, সুবিধা, নাগরিক অধিকার, নগরের সৌন্দর্য, কোন কিছু নিয়ে তাদের ভাববার সময় নেই। টাকার গন্ধে তারা বিভোর। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। লুটপাট করে যা নিয়ে নেওয়া যায়, সেই ধান্দাতেই ব্যাস্ত সময় পার করছেন তারা।

সেদিন চ্যানেল আইতে তৃতিয় মাত্রায় দেখলাম ঢাকা উত্তরের মেয়র জনাব আনিসুল হক সাহেব কথা বলছেন নগরের বিভিন্ন অনিয়ম ও তার গৃহিত পদক্ষেপ নিয়ে । আমি বরাবরই এই মানুষটিকে পছন্দ করি এবং যথেষ্ট আশাবাদি তাকে নিয়ে যে, তিনি হয়তো আমাদের একটি বসবাস যোগ্য সিটি উপহার দিতে পারবেন। তার সক্ষমতার অনেক প্রমানও তিনি ইতোমধ্যে দেখিয়েছেন। কিন্তু ফুটপাথ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন শত চেষ্টা করেও এটাকে দখল মুক্ত করতে পারছেন না। কেন পারছেন না, সমস্যা কোথায় এমন প্রশ্নে তিনি জানালেন, ফুটপাথ দখলে নাকি এমন এমন মহারথিরা জড়িত যে তাদের সরাতে গেলে সমস্যা আছে। ফুটপাথ থেকে প্রতিনিয়ত নাকি বিপুল অঙ্কের চাদা তোলা হয় এবং উক্ত টাকা এ হাত থেকে সে হাত হয়ে শেষ পর্যন্ত যে কোন হাতে পৌছে তা নিচের সারির কেউই জানে না। এমনকি মেয়র নিজেও ঘাপটি মেরে বসে থেকে জানতে পারেন নি। আবার ঢাকা সিটিতে নাকি ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজারের মতো হকার রযেছে। তারা ফুটপাতে হকারী করেই জীবন পরিচালনা করে আসছে। এই ৮০ হাজার লোকের মুখের দেকে তাকিয়ে তিনি চিন্তা করছেন ফুটপাথ থেকে হকারদের না উঠিয়ে তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট মাপের টেবিলের সাইজ করে দেয়ার। যাতে নিবিঘ্নে হকাররা তাদের ব্যবসা চালাতে পারে।

untitled-15_190244

ঢাকা সিটিতে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি লোকের বসবাস। মেয়র তিন কোটি লোকের অসুবিধার চেযে ৮০ হাজার লোকের অসুবিধার কথাটাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছেন। তিন কোটি গোল্লায় যাক আমার ৮০ হাজার চাই। কেন না এই ৮০ হাজারই তিনার পকেট ভরাচ্ছেন। তিনি ঘাপটি মেরে বসে থেকে যে হাতের সন্ধান পান নি সে হাতটা যে তার নিজেরই হাত এ কথা তিনি টেলিভিশনে বলবেন কি করে। ঢাকা সিটিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ টাকা করে হকারদের নিকট থেকে চাদা উঠলে বছরে ১০৮০ কোটি টাকা চাদা তোলা হয়। তার এক অংশ যায় পুলিশের পকেটে বাকি অংশ অদৃশ্য হাতে। ফুটপাতের এ দোকান গুলোতে যে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া আছে তাতে বছরে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। সিটিতে মোট আয়তনে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭ শতাংশ । তারও অর্ধেক দখল করে আছে হকাররা। যার ফলে যানজন আমাদের নিত্যদিনে সঙ্গি্। ফুট পাতের দুই পাশ দিয়েই দোকান বসার কারনে মাঝখানে এক ফিটের মতো যে যায়গা থাকে সেখান দিয়ে যাতায়াতের কোন ব্যাবস্থাই থাকে না। প্রতিনিয়ত সেখানে ঘটছে ছিনতাই। পকেট মার ও মেয়েদেরকে যৌন হেনস্থা করার মতো ঘটনা। হকাররা রাস্তার ড্রেনকে ভরাট করে তাদের দোকান বসাচ্ছে। ময়লা আবর্জনা ফেলে বন্ধ করছে সুয়ারেজ ব্যবস্থা । যার ফলে সমান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকা। সরকার ইচ্ছা করলে হেফাজতের মতো লক্ষ-লক্ষ লোককে গুলি করে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে রাজধানী ছাড়া করতে পারে কিন্তু ৮০ হাজার লোকের নিকট নেহায়েতই দুর্বল।

মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.